মো: জাহিদুর রহমান
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ । এ দেশে প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান উৎসব ঈদ। যার মধ্যে কোরবানির ঈদে মূলত অনেক গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জবাই হয়। প্রাণিসম্পদের হিসাব মতে, বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে। সারা বছরের সিংহভাগ পশু এ সময় জবাই হয়। পশু জবাইয়ের সাথে সাথে যেমন চামড়া সংরক্ষণ জরুরি তেমনি বর্জ্য অপসারণ জরুরি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি মূল্যবান জৈব পদার্থের অপব্যবহার হয় । এ জন্য সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।
এখন সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে সমস্ত বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে তা হলো :
১. যেখানে সেখানে পশু জবাই না করে নির্দিষ্ট জায়গায় পশু জবাই করা ।
২. জবাইয়ের জন্য সম্ভব হলে চাষাবাদের জমি বাছাই করা যেতে পারে অথবা নিজ আঙ্গিনায়ও হতে পারে ।
৩. যেখানে জবাই করা হবে সেখানে জবাইয়ের পূর্বে রক্ত জমানোর জন্য আলাদা ছোট গর্ত খুঁড়তে হবে ।
৪. জবাইয়ের পর রক্ত ছোট নালা তৈরির মাধ্যমে গর্তে ফেলতে হবে ।
৫. তারপর রক্তকে মাটিচাপা দিতে হবে এতে কিছু দিন পর সে রক্ত সারে পরিণত হয়, যা ইউরিয়া সারের মতো কাজ করে। এতে প্রায় শতকরা ১০ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে ।
৬. আবার এ রক্ত শুকিয়ে গুঁড়া করে বøাড মিল হিসেবে মুরগীকে খাওয়ানো যায় যাতে প্রায় ৫০% প্রোটিন থাকে ।
৭. এবার নাড়িভুড়ি যা মানুষ খায় না এমন অংশ যেখানে সেখানে না ফেলে মাছের উপাদেয় খাবার হিসাবে ব্যবহার করা যায় বা এগুলো গর্তে পচিয়ে জৈবসার তেরি করা যায় ।
৮. অপ্রয়োজনীয় হাড়, খুরও কাজে লাগানো যায় যেমন হাড় মেশিনের মাধ্যমে গুঁড়া করে বোনমিল তৈরি করে মুরগিকে, গরুকে খাওয়ানো যায়, যা ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে কাজ করে ।
৯. অপ্রয়োজনীয় যে কোনো বর্জ্য মাটিতে গর্ত করে রাখতে হবে, যাতে করে পরিবেশ বিশুদ্ধ থাকবে ।
এ চামড়া খুবই মূল্যবান, এ চামড়াকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে চামড়া শিল্পের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। জবাইয়ের পর অনেক সময় চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে পরিবেশ দূষিত হয় ।
চামরার ব্যবহার :
১. চামড়া দ্বারা পাদুকা যেমন জুতা, স্যান্ডেল তৈরি করা যায় যা অনেক টেকসই দামি ।
২. চামড়া হতে পোশাক যেমন জামা, কোট, প্যান্ট তৈরি হয় যা শীত প্রধান দেশে অনেক মূল্যবান ।
৩. চামড়া দ্বারা মলাট তৈরি হয় যা মূল্যবান বই বা অন্য কোনো বস্তুর কভার হিসেবে কাজ করে ।
৪. চামড়া দ্বারা বেল্ট, ঘড়ির বেল্ট, মানিব্যাগ ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ তৈরি হয় যা অনেক টেকসই ও দেখতে অনেক সুন্দর হয় ।
৫. চামড়া দিয়ে বিভিন্ন প্রকার খেলনাসামগ্রী যেমন ফুটবল, বাস্কেট বল, র্যাকেট খেলার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা যায় ।
৬. চামড়া দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ড্রামস, বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে চামড়ার ব্যবহার বাড়ানো যায়। এ গুলো বিশেষ করে চীনে, জাপানে ব্যবহার করা হয়।
৭. চামড়ার অংশ বিশেষ হতে আঠা তৈরি হয় যার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে ।
চামড়া সংরক্ষণ :
চামড়া খুবই মূল্যবান সম্পদ। প্রতি বছর চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যাদি রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করা হয়ে থাকে। তাই মূল্যবান চামড়ার মান সঠিক বা ত্রæটিমুক্ত রাখতে কয়েকটি নিয়ম মেনে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে ।
প্রধানত তিনভাবে চামড়া সংরক্ষণ করা যায় । যেমন-
শুষ্ককরণ
শুষ্ককরণ করা হয় চারভাবে।
১. মাটির উপর শুকানো : মাটির উপর চট বিছিয়ে তার উপর চামড়া টানটান করে রাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কুকড়ে না যায় এবং কোনো প্রাণি যেন চামড়ার কোনো ক্ষতি না করতে পারে।
২. ঝুলিয়ে শুকানো : অনেক সময় গাছের ডালের সাথে চামড়া বেধে দিয়ে চামড়া শুকানো যায়।
৩. রশি বা তারের উপর শুকানো : চামড়া যেহেতু ভারী তাই চামড়াকে ঝুলানোর জন্য দুই প্রান্তে দুটি খুঁটি শক্ত করে লাগাতে হবে, তারপর একটু উচুতে তার বা শক্ত রশি বাধতে হবে। এবার চামড়াকে তারের উপর রাখতে হবে।
৪. তাবু বানিয়ে শুকানো : চামড়া শুকানোর জন্য বাঁশের বা লোহার তাবু আকৃতির খাঁচা বানাতে হবে এবং তারপর চামড়া খাঁচার উপর রেখে চামড়া শুকানো যায়।
লবণ দ্বারা সংরক্ষণ
এ পদ্ধতিতে সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ করতে হলে কয়েকটি ধাপ মেনে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে যেমন-
১. প্রথমত চামড়া ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
২. ট্রিমিং এর মাধ্যমে চামড়ায় লেগে থাকা গোশত, চর্বি ও ঝিল্লি উঠিয়ে ফেলতে হবে নতুবা সব জায়গায় লবণ যাবে না।
৩. চামড়ার ওপর মুঠি মুঠি লবণ ছাড়িয়ে হাত দিয়ে ভালোভাবে ঘষে লবণ সব জায়গায় সমভাবে লাগাতে হবে ।
৪. প্রথমবার লাগানো লবণ চুষে নিলে আরও একবার লবণ ছড়িয়ে দিতে হবে।
৫. সাধারণত গরুর চামড়ার জন্য ৫-৭ কেজি এবং ছাগল, ভেড়ার জন্য ১.৫-২ কেজি লবণ দরকার হয়।
পিকলিং পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে চামড়ার ফাইবার অধিক রিসিপটিভ হয় যা ট্যানিং এর জন্য ভালো। এতে চামড়ার এসিডিটি বা পি এইস ৩ হয়। এতে করে ক্রোমিয়াম ট্রানিন চামড়ায় প্রবেশ করে। চামড়া যেন পিচ্ছিল না হয় এ জন্য এতে লবণ যোগ করা হয়। চামড়ায় যেন পচন না ধরে সে জন্য ফানগিসাইড, ব্যাকটেরিওসাইড চামড়ায় ব্যবহার করা হয়। পিকলিং পদ্ধতিতে সালফিউরিক এসিড ব্যবহৃত হয় এবং এ পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় চামড়া সংরক্ষণ করা যায়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে, চামড়া ছাড়ালে, চামড়া সংরক্ষণ করলে দেশের কোটি কোটি টাকা যেমন বাঁচবে তেমনি পরিবেশ বাঁচবে । তাই সবাইকে এসব পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। ড়
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, রামপাল, বাগেরহাট, টেলিফোন : ০৪৬৫৭-৫৬০২৪, মোবাইল-০১৯১৩৮১৩৬৫৬, ই-মেইল : Zahidur.rhman81@yahoo.com